স্বাগতম পহেলা বৈশাখ শুভ নববর্ষ ১৪২৩ - bdwritten.blogspot.com

Latest

ভালোবাসার গল্পো ,কবিতা,গান, ও না জানা কথা দিয়ে সাজানো

Wednesday, April 13, 2016

স্বাগতম পহেলা বৈশাখ শুভ নববর্ষ ১৪২৩

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা
বৈশাখ। বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম
মাস। বৈশাখ ষড় ঋতুর প্রথম ঋতু
গ্রীষ্মের প্রথম মাস। বৈশাখ বাংলা
নববর্ষের মাস।
বৈশাখের প্রথম দিন নতুন বছরের শুরুর
দিন, হালখাতার দিন। বৈশাখের প্রথম
দিন থেকে বাঙালি-জীবনে নতুন বছরের
সূচনা। নতুন জীবনের গোড়াপত্তন।
বৈশাখের সঙ্গে বাঙালি-জীবনের
একটা অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
নবান্নের পর মানুষ এ মাসে যেন
কর্মক্লান্ত জীবনের মাঝে অনাবিল
স্বস্তি ফিরে পায়। কাজের চাপ নেই।
ক্ষেত-খামারে যেতে হবে না।
গোলাতে ধান তোলা হয়ে গেছে।
সুতরাং সম্পূর্ণ অবসর জীবন।
সন্ধ্যাবেলা গানের আসর বসে। আসরে
পালাগান হয়, পুঁথিপাঠ হয়। কখনও
যাত্রাগানের আসর বসে। বছরের
অন্যান্য মাসে যেন সারা দিনমান
ক্ষেত্রে খামারে কাজ করতে হয়,
বৈশাখে এসে জীবনের ধারা বদলে
যায়। সারাদিন কাজ নয়। সকাল থেকে
সন্ধ্যা হয়ে ওঠে উৎসবে মুখরিত। গান-
বাজনায় মেতে ওঠে জীবন। এ জীবনের
মাঝেই বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে পায়
এক নতুন আস্বাদ, নতুন করে জীবন চলার
পথের উপাদান, প্রেরণা আর উদ্দীপনা।
তাই বাঙালি জীবনে এ মাসের গুরুত্ব
অপরিসীম। জীবনের একঘেয়েমি থেকে
মুক্তি পেয়ে পল্লী মানুষের জীবনে এ
মাসে, এ ঋতুতে নেমে আসে এক নব
আনন্দধারা। এ ধারায় সিঞ্চিত হয়ে
মানুষ নব উদ্দমে পরের মাসগুলোর
কর্মমুখর জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
বৈশাখে উৎসবের ঢল নেমে আসে।
মেলা বসে গ্রামে গ্রামে। শহরে-নগরে
গঞ্জে। কত না বিচিত্র হাতের তৈরি
দ্রব্যসম্ভার সেসব মেলায় বিক্রি হয়।
সে সকল দ্রব্যসামগ্রীতে বাংলার
মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনধারার একটা
স্পষ্ট চিত্র ফুটে ওঠে। এ সকল মেলা যেন
গ্রাম-বাংলার মানুষেরই প্রতিচ্ছবি।
তাদের জীবন যেন খন্ড খন্ড হয়ে ধরা
পড়ে তাদের হাতের কারুকাজে। মাটির
পুতুল, পাটের শিকা, তালপাতার পাখা,
সোলার পাখি, বাঁশের বাঁশি, ঝিনুকের
ঝাড়, পুঁতিরমালা, মাটির তৈরি হাতি-
ঘোড়া-বাঘ-সিংহ কত যে অদ্ভুত সব
সুন্দর জিনিসের সমাবেশ ঘটে সেই
মেলায়, চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হয়
না বাংলার মানুষের জীবন কত
সমৃদ্ধশালী। মানুষ গরীব হতে পারে,
দারিদ্র্য চিরসাথী হতে পারে, কিন্তু
এসব জীবন জটিলতা তাদের মনকে
আনন্দ খুশি থেকে বঞ্চিত করতে পারে
না। গানে-সঙ্গীতে তারা তাদের
জীবনকে ভরিয়ে তোলে। শীত পেরিয়ে
আসে বসন্ত। কোকিলের কুহুতান শেষ
হয়ে গেলে বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম আসে।
পৌষ-মাঘের শীত আর ফাল্গুন-চৈত্রের
বসন্ত যেন এক হয়ে তাদের জীবন আনন্দ
হিল্লোলিত করে তোলে বৈশাখের
আগমনে। তাদের জীবনে নতুন গতি
আসে। নতুন পথ-পরিক্রমার বার্তা বয়ে
আনে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল।
কিন্তু গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ তাদের
জীবনকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করতে
পারে না। তারা খুশিতে গান গায়,
তারা আনন্দে নাচে, তারা সংগীতের
আসরের আয়োজন করে। তাই বৈশাখ
বাংলার মানুষের জীবনী শক্তি।
বাংলাদেশে প্রতি মাসে একটা না
একটা পার্বণ লেগেই আছে। এই পার্বণ
তো প্রবাদে পরিণত হয়েছে। তাই বলা
হয়, বাংলাদেশ বারো মাস তেরো
পার্বণে দেশ। বৈশাখ মাসেও প্রবাদের
সেই বাণীর কথা নানান পার্বণের মাঝ
দিয়ে প্রতিফলিত হয়। পালা-পার্বণের
এই দেশে সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই
আছে। জাতিগতভাবেও বাঙালি
ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির দেশ।
সামাজিক অনুষ্ঠানে নানা ধরনের গান
পরিবেশিত হয়। এসব গানে বাংলার
মানুষের প্রাণের কথা, মনের ভাষা,
হৃদয়ের আবেদন আর অন্তরের আকুলতা
অত্যন্ত বাস্তব হয়ে ধরা পড়ে। মাঠের
গান, বাটের গান, লোকগান বাংলা
মানুষের আপন সংস্কৃতি। এতে রয়েছে
পল্লী মানুষের সহজ-সরল ভাবের
প্রকাশ। এতে শাস্ত্রীয় সংগীতের
জটিলতা নেই। সুরের বক্রতা নেই। আছে
শুধু সহজ-সরল অনুভূতি আর আবেদন। তাই
লোকসংগীত বাংলার মানুষের প্রাণ।
এ সঙ্গীত চিরায়ত। এতে আছে মাটির
কাছাকাছি মানুষের প্রাণের ছোঁয়া।
তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-
আকাঙক্ষা, বিরহ-বেদনার কাহিনী এ
সঙ্গীতের মূল বিষয়বস্তু। গ্রাম্য জীবন,
প্রকৃতি আর পল্লী মানুষের মনের কথা-
এই তিনের মিলনে নির্মিত এই গান। এই
গান সৃষ্টির মূলে রয়েছে কৃষক, জেলে,
মাঝি, তাঁতি, কুমোর ও কামারের মতো
গ্রাম্য মানুষের প্রাণের আর্তি আর
হৃদয়ের ভাষা। এ গানে কোনো
কৃত্রিমতা নেই, কোনো কষ্ট-কল্পনা
নেই। বৈশাখী গানের ভেতরও রয়েছে
গ্রাম্য সমাজের একটা নিবিড় সম্পর্ক।
তাই এই গান বিষয়, ভাব, রস আর সুরের
দিক দিয়ে অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গ্রীষ্মের
খরতাপের বৈশিষ্ট্য গানের মাঝেও
প্রতিফলিত। এ ঋতুর গানের বাণীতে
গ্রীষ্মের রূপ ফুটে উঠেছে। গ্রীষ্মের রূপ
দু’ভাবে ধরা পড়েছে। একটি তার
বহিরঙ্গ দৃশ্যমূর্তি, অপরটি অন্তরঙ্গ
ভাবমূর্তি। গ্রীষ্মের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য
রূপটি রুক্ষ, কঠোর, বিশুদ্ধ ও প্রচন্ড।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈশাখের এই
রূপের কথা ভেবে লিখেছেন গান, ‘এসো,
এসো, এসো হে বৈশাখ, তাপস নিশ্বাস
বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের
আবর্জনা দূর হয়ে যাক। যাক পুরাতন
স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি;
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক’।
পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের মানুষের
সামাজিক পার্বণের বিচিত্র
সমারোহে জড়িয়ে থাকা প্রকৃতির এক
নব অভিষেক। প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে
কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া বৃক্ষের শাখায়
শাখায় লাল-হলুদ ফুলের রঙিন উচ্ছ্বাস
যেমন এক নতুন সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি
তোলে, নববর্ষের আনন্দোচ্ছল পহেলা
বৈশাখ যেন সেই উচ্ছ্বাসেরই আরেক
রূপ। এ সকল রূপের কথাই কবি লিখেন
কবিতায় আর গীতিকার গানে।
পহেলা বৈশাখের রূপকল্পনায় উৎসবের
ভূমিকা তাৎপর্যময়। পুরাতনের সাথে
নতুনের যে যোগাযোগ পহেলা বৈশাখ
তারই সূত্রধর। বৈশাখের ভোরের
হাওয়া মনের চিরন্তন রূপের বর্ণালী
ছড়াতে আরেক দিনের প্রভাত নতুনের
বাণী শুনিয়ে হৃদয়ে দোলার স্পন্দন
তোলে। বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠে
বছর ঘুরে এলেই উচ্চারিত হয়, আসুক
বৈশাখ, নতুনের বাণী শুনিয়ে তাদের
হৃদয়কেও সোচ্চার করে তুলুক। তাই
বাংলার মানুষ হৃদয়ের অমৃত বাণী দিয়ে
পহেলা বৈশাখকে বরণ করে সুরেলা
কণ্ঠে বলে, স্বাগতম পহেলা বৈশাখ।

2 comments:

  1. অরিজিনইউকেতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ১৪% ছাড়! এ সুযোগ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।

    ReplyDelete
  2. প্রেমের ছন্দ এর মতো পড়ে খুব ভালো লাগলো।


    ReplyDelete

কিভাবে একজন সফল ব্লগার হিসেবে নিজেকে তৈরি করবেন

সফল বলি। একজন সফল ব্লগার হিসেবে যদি আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে চান তবে আপনাকে কয়েকটি বিসয়ের উপরে খুব ভালোভাবে গুরুত্বারোপ করতে হবে। নিম্নে ব...