মৎস্যকন্যারা হলো অর্ধমানবী
অর্ধমাছ। বর্ণনায় যাদের উপরের অর্ধেক
হলো অপরূপ যুবতী। পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশের উপকথায় মৎস্যকন্যার বর্ণনা
পাওয়া যায়, যার মধ্যে দূরপ্রাচ্য,
ইউরোপ-এশিয়া সবাই আছে।
মৎস্যকন্যাদের নিয়ে প্রথম বর্ণনা
পাওয়া যায় প্রাচীন অ্যাসিরিয়াতে
১০০০ খ্রিস্টপূর্ব। এখানে বর্ণনা থেকে
জানা যায় দেবী অ্যাটারগাটিস ভুল
করে যখন তার মানব প্রেমিককে হত্যা
করে ফেলেন লজ্জায়-দুঃখে পানিতে
ঝাঁপ দেন আত্মহত্যা করার জন্য। কিন্তু
দেবী অ্যাটারগাটিস এত সুন্দরী
ছিলেন যে, সমুদ্র দেবতা পসাইডন
তাকে মৃত্যুর রাজ্যে যেতে না দিয়ে
অর্ধমানবী অর্ধমাছ রূপে নবজীবন দান
করেন। একই বর্ণনা পাওয়া যায়
ব্যাবিলনীয় উপকথায় দেবী ‘ইয়া’কে
নিয়ে। গ্রিক উপকথায় এই
অ্যাটারগাটিসই আবার ‘আফ্রোদিতি’
নামে পরিচিত। সব উপকথা পড়ার পরে
জানা যায় মৎস্যকন্যারা সংগীতে
ভীষণ পারদর্শী। সুরের মায়াজাল
সৃষ্টির মাধ্যমে তারা জাহাজের
যাত্রীদের মৃত্যুর দিকে আকর্ষণ করত।
তাদের গানের গলা এতই চমৎকার ছিল
যে, সেই গান নাবিকদের কানে
পৌঁছলে নাবিকরা সেই দ্বীপের
দিকেই ধাবমান হতো। ফলে সেই
জাহাজ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে সাগরে পতিত
হতো সবাই। অ্যাটারগাটিসের মানব
প্রেমের অনুকরণে মৎস্যকন্যারা এরপর
ডুবে যাওয়া নাবিকদের তাদের
প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেয়ার জন্য
সাগরের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে তাদের কাছে
পৌঁছে যেত, হায় তারা বুজত না
মানবকুল যে পানির নিচে বেঁচে
থাকতে পারে না। ফলস্বরূপ যখন
মৎস্যকন্যারা পানির নিচে দিয়ে ডুবন্ত
নাবিকদের উদ্ধার করে তাদের সাইরেন
দ্বীপে নিয়ে আসত, ততক্ষণে তারা
মৃত্যুরাজ্যে পৌঁছে যেত।
মৎস্যকন্যা : কোনো কোনো উপকথায় এই
মৎস্যকন্যারা মানুষের প্রতি ভীষণ
বিদ্বেষপূর্ণ আবার কোথাও কোথাও
প্রেমময়। তবে যাই হোক না কেন শেষ
পর্যন্ত নাবিকরা মারা যেত।
মৎস্যকন্যাদের মৃত্যু : আর্গোনটরা
(সোনালি ভেড়ার চামড়া সংগ্রহ
অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের দল)
একবার সাইরেনদের দ্বীপ অতিক্রম
করতে যাচ্ছিল। তাদের পরিণতির কথা
ভেবে দেবী আফ্রোদিতি অর্ফিউসকে
মৎস্যকন্যা সাইরেনদের দ্বীপ
অতিক্রমণের সময় তার বীণায় মোহময়
সুর সৃষ্টি করতে নির্দেশ দেন। অর্ফিউস
ছিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব সুর
স্রষ্টা। দেবতাদের পর মরণশীলদের
মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সুরের জাদুকর এই
অর্ফিউস। সে এক বিশেষ ধরনের বাঁশি
বাজাত, যেটার নাম ছিল লাইর। দেবতা
হারমিসের তৈরি এ বাঁশি পূর্ণতা
পেয়েছে অর্ফিউসের কাছে। অর্ফিউস
ছিল দেবতা অ্যাপোলোর পুত্র।
অর্ফিউসের মা ছিল ক্যালিউপ।
অর্ফিউসের বাস ছিল পম্পেলিয়ায়,
যেখানে সে তার শৈশব মা এবং
বোনদের সঙ্গে কাটিয়েছে। দেবতা
অ্যাপোলো অর্ফিউসকে খুব
ভালোবাসতেন এবং তিনিই প্রথম
অর্ফিউসকে লাইর বাজানো শেখান।
জেসন ছিল আর্গোনট দলের নেতা।
জেসনের দল যখন সাইবেনিয়া দ্বীপের
পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন অর্ফিউস তার
বাঁশি বাজানো শুরু করেন। তার সুর
সাইরেনদের সুরকে ছাপিয়ে গেল।
নাবিকরা নিরাপদে দ্বীপ পার হতে
পারল। কিন্তু একজন আর্গোনট
জাহাজের পাল উড়ানোর কাজে ব্যস্ত
থাকায় তার কানে অর্ফিউসের সুর
প্রবেশে ব্যর্থ হয়। ফলে সে উš§াদের
মতো জাহাজ থেকে লাফিয়ে সাগরে
পড়ে যায়। আফ্রোদিতি অবশ্য পরে
তাকেও ঊদ্ধার করেন। ট্রয়যুদ্ধ শেষে
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে মহাসমুদ্র
দেবতা পোসিডনের ষড়যন্ত্রে
দিকভ্রান্ত অডিসিউসও সাইরেনদের
কবলে পড়েন। ফলে তিনি সাইরেনদের
দ্বীপ অতিক্রম করার আগে প্রত্যেক
নাবিকের কান মোম দিয়ে বন্ধ করে
দেন এবং নিজেকে মাস্তুলের সঙ্গে
বেঁধে রাখেন। ফলে সাইরেনরা
প্রথমবারের মতো ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার
লজ্জায় তারা সমুদ্রে ডুবে আত্মহত্যা
করে। মৃত্যুর পর সাইরেনরা সমুদ্রশিলায়
পরিণত হয়। এভাবেই গ্রিক প্ররাণের
একটি চমৎকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
বর্তমানের মৎস্যকন্যা: কলোম্বাস,
ক্রিস্টোফার কলোম্বাসের লগ বুক
থেকে জানা যায় তিনি যখন
ক্যারিবিয়ান দ্বীপের পাশ দিয়ে
যাচ্ছিলেন, তখন নাকি এক অর্ধমানবী
অর্ধমাছকে সমুদ্রবেলায় বসে থাকতে
দেখেছেন।
মৎস্যকন্যা : ১৯৪৭ সালে ৮০ বছর বয়স্ক
একজন জেলে নাকি উপকূল থেকে ২০ গজ
দূরে এক মৎস্যকন্যা দেখেছিলেন, যে
নাকি গলদা চিংড়ির দাড়া দিয়ে চুল
আচড়াচ্ছিল, কিন্তু যখনই ওই মৎস্যকন্যা
বুঝতে পারল কেউ তাকে দেখছে অমনি
টুপ করে পানির মধ্যে তলিয়ে যায়।
১৮৫৭ সালের জুন ৪, ব্রিটিশ শিপিং
গ্যাজেটে লেখা আছে এক স্কটিশ
নাবিক নাকি সাগরে মধ্যে ঢেউের উপর
এক কিশোরীকে বসে থাকতে দেখেছে।
১৮৩৩, আইল অভ ইয়েল, ছয়জন জেলে
নাকি এক মেয়েকে তাদের জালে
আটকায়, তিন ফুট লম্বা ওই মেয়ে নাকি
জেলেদের নৌকায় উঠার পর ৩ ঘণ্টা
ছিল, সে জেলেদের সঙ্গে কোনো
প্রতিরোধে যায়নি। শুধু আস্তে আস্তে
ফোপাচ্ছিল। ওই মেয়ের নাকি কোনো
মাছের মতো লেজ ছিল না। কিন্তু তার
দেহে সামান্য আঁশ ছিল। জেলেরা
মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। নৌকা আর
সাগরের মধ্যে তারা আর প্রতিবন্ধকতা
তৈরি করে না। ইশারায় মেয়েটিকে
চলে যেতে বলে। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি হেনে
মেয়েটি নিখুঁত এক ডাইভ দিয়ে সাগরে
চলে যায়। সাগরে নেমে কিছুক্ষণ পর
আবার উঠে ঢেউের উপর ভেসে ভেসে
তাদের কৃতজ্ঞতা জানায় এবং এক সময়
সাগরে হারিয়ে যায়। এ গল্প এডিনবার্গ
ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল হিস্ট্রির
প্রফেসর ম্যাক্লিহানকে শোনান
এডমন্ডসন নামে এক জাহাজের
কাপ্তান।
১৮১১, অক্টোবর ২৯ ক্যাম্পবেল টাউন,
সাগরকূলে ছোট্ট এক স্কটিশ গ্রাম। জন
মেসিইক ছুটতে ছুটতে শেরিফকে এসে
বলেন এইমাত্র সে সমুদ্রতটে এক
মৎস্যকন্যা বসে থাকতে দেখেছে।
শেরিফ তাকে নিয়ে যায় রেভারেন্ড
জর্জ রবার্টসন, রেভারেন্ড নরম্যান
ম্যাক্লদ এবং রেভারেন্ড জেমস
ম্যাক্সয়েলের কাছে, জন মেসিইক হলফ
করে বলে রেভারেন্ডদের কাছে যা সে
শেরিফদের কাছে বলছে। বিজ্ঞ
রেভারেন্ড মণ্ডলী স্বীকার করে নেয়
জন মেসিইক সত্যি বলছেন।
Sunday, May 8, 2016
New
মৎস্যকন্যাদের অজানা গল্প
About NRS NISSAN
alistarbot is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of alistarbot is to provide the best quality blogger templates.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
কিভাবে একজন সফল ব্লগার হিসেবে নিজেকে তৈরি করবেন
সফল বলি। একজন সফল ব্লগার হিসেবে যদি আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে চান তবে আপনাকে কয়েকটি বিসয়ের উপরে খুব ভালোভাবে গুরুত্বারোপ করতে হবে। নিম্নে ব...
প্রেমের ছন্দ এর মতো পড়ে খুব ভালো লাগলো।
ReplyDelete