ভালবাসা দিবসের ইতিহাস - bdwritten.blogspot.com

Latest

ভালোবাসার গল্পো ,কবিতা,গান, ও না জানা কথা দিয়ে সাজানো

Wednesday, February 10, 2016

ভালবাসা দিবসের ইতিহাস


আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ভালবাসা
দিবসে বিশ্বাস করি না। আমার
ছোটবেলায় বাংলাদেশে
ভালবাসা দিবস উৎযাপন হতো না।
হঠাৎ করে একদিন দেখলাম দেশে
হলমার্কস ভালবাসা দিবস উৎযাপন
করা হচ্ছে। জোড়ায় জোড়ায় কপত-
কপতি রিকশায় হুট উঠিয়ে কিংবা
পার্কের কোণায় বসে কবুতরের
মতো গুটুর গুটুর করছে আর করছে।
সেই সঙ্গে ফুল, কার্ড আর টেডি
বিয়ারের ব্যবসা ভালই চলছিল।
আমার কাছে বরং হুমায়ূন
আহমেদের সেই বিখ্যাত সংলাপ,-
ভালবাসা হইলো শরমের ব্যাপার
তবে দরকার আছে; এটাই সবচেয়ে
উত্তম বলে মনে হয়। তারপরও মাঝে
মাঝে কবির ভাষায় আবেগের
জোয়ারে ভেসে ভালবাসার
সংজ্ঞা আমিও দেই। কিন্তু তা
কোন ক্রমেই কবি গুরুর নখের কাছে
গিয়ে দাঁড়ায় না। সত্যি যদি কবি
গুরুর মতো যদি ভালবাসার কথা
ব্যক্ত করতে পারতাম- ভালবাসি,
ভালবাসি-এই সুরে কাছে কাছে-
দূরে, জলে-স্থলে বাজায় বাঁশি।
”ভালবাসা”সম্ভবত পৃথিবীর
সবচেয়ে দুর্লভ আর আকাঙ্খিত
একটি আবেদন। ঠিক কবে
ভালবাসার উৎপত্তি তা জানা
সম্ভব না হলেও এতটুকু ভেবে নেয়া
যায়যে এর ইতিহাস বিবর্তনের
চেয়েও আদিম ও পুরোনো।
প্রাণীজগতের অন্যান্য সব প্রাণের
মাঝে ভালবাসা পরিলক্ষিত হলেও
মানুষ যেভাবে একে জীবন ও
প্রেরণার অনুষঙ্গ করেছে তা আর
কেউ পারেনি।
ভালবাসা নামের এই অজানা
অদেখা আর চাপা কষ্টের সেই
অব্যাক্ত অনুভুতিকে মহিমান্বিত
করতেই নাকি প্রতি বছরের একটি
বিশেষ দিনকে ঘোষণা করা
হয়েছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ যার
বাংলায় মানে দাঁড়ায় ভালবাসা
দিবস। পাশ্চাত্যের ক্যালেন্ডার
অনুযায়ী দিনটি ১৪ ফেব্রুয়ারি,
মানে ঠিক ফাল্গুনের ২য়
দিনটিতে।
আমার মতো অনেকেই বলে অত
ভালবাসা দিবসের প্রয়োজন কি?
প্রতিটি দিন হোক ভালবাসা
দিবস। একটু খোঁজ নিলেই দেখা
যাবে, এরও এক পুরোনো ইতিহাস
আছে?কেন এই ‘ভ্যালেন্টাইন্স
ডে’ ? আর কবে থেকেই এই দিবসের
এর শুরু ? কেই বা ছিলেন
ভ্যালেন্টাইন ? এই প্রশ্নগুলোর
উত্তর খুঁজে পেতে হলে ইতিহাসের
পথে পেছনে হাঁটতে হবে কয়েক
শতাব্দী। ভালবাসা দিবসকে
কেন্দ্র করে অনেক গল্পই প্রচলিত
আছে। আজ ভালবাসা দিবসের
সবচেয়ে প্রচলিত দুটো গল্পের
সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেব।
প্রথম গল্পটি হলো, সেন্ট বা সন্তো
ভ্যালেন্টাইন নামের এক রোমান
ক্যাথলিক ধর্মযাজক ছিলেন৷ তিনি
ধর্মযাজক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
ছিলেন চিকিৎসকও৷ সে সময়
রোমানদের সম্রাট ছিলেন
দ্বিতীয় ক্লডিয়াস৷ হয়েছে কি,
বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক
রাষ্ট্র জয় করে চলেছে৷ আর যুদ্ধের
জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী
সেনাবাহিনী৷ কিন্তু, সমস্যা
দাঁড়ায় তরুণীদের নিয়ে৷ তারা যে
কিছুতেই তাদের পছন্দের পুরুষটিকে
যুদ্ধে পাঠাতে চায় না৷ তখন
সম্রাট ক্লডিয়াস মনে করলেন,
পুরুষরা বিয়ে না করলেই বোধ হয়
যুদ্ধে যেতে রাজি হবে৷
ভাবনাটার বাস্তবায়ন করলেন
তিনি। বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন
সম্রাট৷ কিন্তু ভালবাসার তাড়নায়
ছুটে চলা তারুণ্যকে কি আর আইন
করে বেধে রাখা যায়? এগিয়ে
এলেন সেন্ট বা সন্তো
ভ্যালেন্টাইন৷ তিনি নিজে সকল
প্রেমে আবদ্ধ তরুণ -তরুনীদের এক
করার ব্যবস্থা করলেন, বিয়ে
দিলেন সবাইকে। কিন্তু সেই প্রথা
বেশি দিন তার ধারা বজায়
রাখতে পারলো না৷ ধরা পড়লেন
ভ্যালেন্টাইন৷ তাঁকে বন্দী করা
হলো৷ কিন্তু, তখন নতুন করে
আরেকটা সমস্যা দেখা দিল৷ তার
অনেকে ভক্তরাই ভ্যালেন্টাইন’কে
দেখতে কারাগারে যেতেন৷ দিয়ে
আসতেন তাদের অনুরাগের চিহ্ন
হিসেবে অনেক ধরনের ফুলের
শুভেচ্ছা৷ তাদের মধ্যে একটি অন্ধ
মেয়েও ছিল৷ শোনা যায়, সেন্ট
ভ্যালেন্টাইন তার অন্ধত্ব দূর
করেন৷ শুধু যে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে
দিয়েছিলেন তাই নয়, সঙ্গে
মেয়েটির প্রেমে আবদ্ধ হয়ে
ধর্মযাজকের আইন ভেঙে তাকে
বিয়েও করে জীবনসঙ্গী করেন
তিনি৷ কিন্তু তারপর? এমন একটা
খবর রাজার কানে পৌঁছোতেই
তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ডের
আদেশ দেন৷ ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার
আগে, প্রিয়াকে লেখা
ভ্যালেন্টাইনের শেষ চিঠিতে
ছিল – ‘লাভ ফ্রম ইউর
ভ্যালেন্টাইন’৷ আর সেই দিনটিও
ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি৷ ৪৯৬
খ্রিস্টাব্দে পোপ গেলাসিয়াস
প্রথম এই দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইন
ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন৷ ১৭০০
শতাব্দীতে দিনটিকে
জনপ্রিয়ভাবে পালন শুরু করে
ব্রিটেন৷ শুরু হয় হাতে লেখা কার্ড
অথবা উপহার বিনিময়৷ এরপর ১৮৪০
সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম
‘ভালবাসা দিবস’-এর উপহার তৈরি
শুরু করেন এস্থার এ হাওল্যান্ড৷
উল্লেখ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো
‘ভ্যালেন্টাইন কার্ড’-টি সংরক্ষিত
আছে লন্ডনের ব্রিটিশ
মিউজিয়ামে৷
আরেকটি গল্প : এই গল্পটির সঙ্গে
আগের গল্পের মিলও আছে
খানিকটা। খ্রীষ্ট ধর্মের শুরুর
দিকে ‘ভ্যালেন্তিনাস’ নামধারী
একাধিক সন্তের বা সেন্টের কথা
ইতিহানে জানা যায়, আর এই
গল্পটি ঘিরে আছে প্রকান্ড
অনিশ্চয়তা। তবে সবচেয়ে
গ্রহণযোগ্য তথ্যমতে
‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এর উৎপত্তি
রোমান সন্ত ‘ভ্যালেন্তিনাস’ এর
মৃত্যুকে কেন্দ্র করে । খৃষ্টীয় তৃতীয়
শতকের মাঝামাঝি ক্লদিয়াস
গোথিকাস নামে একজন রোমান
সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন। সে
সময়ে তার অনুমতি ছাড়াই
খ্রিস্টান যুগলের বিয়ে আয়োজন
করা এবং সহায়তা করার অপরাধে
সন্ত ভ্যালেন্তিনাসকে আটক করা
হয়। এরপর সম্রাটের নির্দেশে রোম
নগরীর ফ্লামিনিয়ান গেট’ এর
বাইরে শিরচ্ছেদ করে তাকে হত্যা
করা হয় । পরবর্তীতে চতুর্দশ
শতাব্দীতে ইংরেজি সাহিত্যের
জনক জিওফ্রি চোচার ‘দি
পার্লামেন্ট অব বার্ডস’ কবিতায়
‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এর কথা তুলে
ধরেন । এছাড়াও আরও কিছু
সাহিত্যের পাতায় এই ভালবাসা
দিবস নামের বিশেষ দিনটির
খোঁজ পাওয়া যায় । এর মধ্যে
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত
বিখ্যাত ট্র্যাজেডি ‘হেমলেট’ ।
প্রথমদিকে ভালবাসার উদযাপনের
দিনটি সীমাবদ্ধ ছিল ইংল্যান্ডের
রাজকীয় পরিবার এবং অভিজাত
সমাজে ।
উনবিংশ শতাব্দীতে এই দিনটি
সার্বজনীন উৎসব হিসেবে
প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরু হয়
ভালবাসার মানুষকে ফুল, গ্রিটিংস
কার্ড, চকলেট, অলংকারসহ নানা
উপহার দেয়া ও একান্তে সময়
কাটানোর রীতি। বিংশ
শতাব্দীতে ভালবাসা দিবস
পৌঁছে যায় মানুষের হৃদয়ে গভীরে,
ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী ।
বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে নানা
বৈচিত্র লক্ষণীয়। চীনে
ভালবাসা দিবসকে বলা হয়
‘কিক্সি ফেস্টিভাল’ যা উদযাপিত
হয় চন্দ্রপঞ্জিকার সপ্তম মাসের
সপ্তম দিনে, ফিনল্যান্ডে এর নাম
‘ইস্তাভানপাইভা’ যার অর্থ
‘বন্ধুত্বের দিন’, ল্যাটিন
আমেরিকাতেও এই দিবস উদযাপিত
হয় বন্ধুত্ব ও ভালবাসার দিন
হিসেবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র,
স্পেন, পর্তুগাল, গ্রীস, জাপান সহ
বিভিন্ন দেশে ভিন্ন নামে
দিনটি উদযাপিত হয়। পাশ্চাত্য
সংস্কৃতির অনুকরণে বাংলাদেশ,
ভারত, পাকিস্তান সহ সব দেশেই
বাড়ছে দিনটির কদর। বিশেষত তরুণ
সমাজে দিনটির মূল্য রীতিমত
চোখে পড়ার মত। যদিও ভালবাসা
নিয়ে মানব মস্তিষ্কে কিছু
সমীকরণ আর হৃদয়ের গহনে কিভাবে
তার উৎপত্তি হয়,- এখনো নির্ণয়
করা বিজ্ঞানীদের জন্য সম্ভবপর
হয়নি। শোনা যায়, পৃথিবী থেকে
যত সত্যিকারের প্রেমিক
প্রেমিকা মারা যায় তাদের
ভালবাসা নাকি জমা থাকে
সুর্যের কাছে,তাইতো সুর্যের রং
লাল। ভোরের সুর্যোদয় ভালবাসার
মানুষের মনে রং ছড়ায়। তাইতো
বিশ্বের সব প্রেমিক ভোরের
সুর্যের ছড়িয়ে দেয়া আলোর কাছ
থেকে দীর্ঘ নিশ্বাসে ভালবাসা
সংগ্রহ করে। প্রকৃতি থেকে নেয়া
এ ভালবাসা বিলায় সারাদিন
একে অন্যের মাঝে। যদিও এই
মিথের উৎপত্তি কোথা থেকে
আমার তা জানা নেই।
সবাইকে ভালবাসা দিবসের
শুভেচ্ছা। বছরের প্রতিটি দিনেই
সেন্ট বা সন্তো ভ্যালেন্টাইনের
সেই রাঙ্গা ভালবাসা ছড়িয়ে
পড়ুক সবার মনে।

No comments:

Post a Comment

কিভাবে একজন সফল ব্লগার হিসেবে নিজেকে তৈরি করবেন

সফল বলি। একজন সফল ব্লগার হিসেবে যদি আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে চান তবে আপনাকে কয়েকটি বিসয়ের উপরে খুব ভালোভাবে গুরুত্বারোপ করতে হবে। নিম্নে ব...