চুপকথা - bdwritten.blogspot.com

Latest

ভালোবাসার গল্পো ,কবিতা,গান, ও না জানা কথা দিয়ে সাজানো

Monday, March 7, 2016

চুপকথা


আকাশে খুব মেঘ করেছে। কালো হয়ে আসছে আকাশ। কালো মেঘে নাকি বৃষ্টি হয়। যেকোন সময় আকাশের কান্না শুরু হবে। কথা নিজের ঘরে চুপ করে বসে বসে রেডিওতে আরজে অভিকে শুনছে।
অসম্ভব সুন্দর এই বিকাল। মেঘের ডাকাডাকি। হয়ত এখনি বৃষ্টি হবে। আচ্ছা? একটা প্রশ্ন করি? আপনাদের কোনটা বেশি প্রিয়? বৃষ্টির গন্ধ? নাকি বৃষ্টির শব্দ?
রেডিওতে অভির এই কন্ঠস্বর মুগ্ধ হয়ে শোনার ব্যাপারটা কথার একরকম নেশা হয়ে গেছে। মনে হয় অভিকে না শুনলে তার ঘুম হবে না, ক্ষুধা পাবে না। কেমন এক অস্থিরতা কাজ করে তার ভিতর।
কথার আর একটা ব্যাপার হয় অভিকে শুনতে শুনতে। সে নিজের মতই অভির সাথে কথা বলতে শুরু করে। ‘বৃষ্টি আমার বেশী ভালোলাগে না। কিন্তু বৃষ্টি শেষে যে বাতাসের রেশ আমার কানে, মুখে, হাতে, পুরো শরীরে এসে লাগে সেই অনুভূতিটাই আমার বেশী ভালোলাগে। আচ্ছা এটা কি বৃষ্টির গন্ধ নাকি বৃষ্টির ছন্দ?
ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যে। কথা অভির শোতে SMS পাঠায় ‘বৃষ্টিতে এক কাপ চা হাতে আর কানের সাথে তুমি। মানে তোমার প্রিয় কণ্ঠ, শুনতে ভীষণ ভালোলাগে আমার’। আরো অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে কথার। কিন্তু সবসময় ইচ্ছের সব কথা জানাতে হয় না।
কথা টেরও পায় না। অভি তার SMS পেয়েও পড়লো না। অনি অনেকের SMS পড়তে শুরু করলে কথার অভিমান হয়। সেই অভিমানও নিজে নিজেই ঝেড়ে ফেলে। ‘সবার SMS চোখে পড়ে, আমারটা পড়ে না। পঁচা ছেলে’। একলাই বলে চলে কথা। কথা এটাও টের পায় না, অভি শো শেষে সোডিয়াম আলোর নিচে বৃষ্টি ভেজা পিচঢালা রাস্তায় আনমনে হাঁটছে আর কথার SMS মনে করছে।
একদিন অভি শোতে দেরী করে আসে। কথার খুব চিন্তা হয়। কি হল অভির? কোন বিপদ নাতো? অনেক অনেক চিন্তা আসে মাথায়। রেডিও অন করাই থাকে। অস্থির হতে থাকে সে। হুট করেই অভির কন্ঠ শুনতে পেয়ে ভালোলাগায় মন ভরে ওঠে।
স্বাগত বন্ধুরা, SORRY আজ দেরি হল একটু। আমাকে শুনে নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে আমার বেশ ঠাণ্ডা লেগেছে। তাই না? আচ্ছা আছি তো অনেকক্ষণ। এখন বরং আমরা সুন্দর একটা গান শুনে ফেলি। সাথে গরম ধোঁয়া তোলা এক পেয়ালা কফি হলে মন্দ হয় না। আর ফিরবো কিন্তু একটু পরেই। যেওনা কোথাও। রেডিওতে অভির ঠাণ্ডা লাগা কন্ঠ ভেসে আসে।
ইস! তার ঠাণ্ডা লেগেছে! অথচ আমি মনে মনে কতকিছু চিন্তা করলাম। আচ্ছা? তুমি কি বাচ্চা? তোমার এমন ঠাণ্ডা লাগে কিভাবে? নিজে নিজেই বলে চলে কথা। নিজের মতো আবারো লিখে পাঠায় অভিকে। অভি আজো দেখে পড়ে না সেটা। মুচকি হাসে। কথাও মুচকি হেসে ভাবে, না পড়লেও ক্ষতি নেই। অনএয়ারে তো আছোই।
অভির যখন শো থাকে না, সেইদিনগুলো কথার খুব বড় মনে হয়। যেন কাটতেই চায় না। আবার যখন শো হয়, মনে হয় সময় খুব দ্রুত চলে যায়। হয়ত মানুষের ভালো সময় কিংবা পছন্দের সময় দ্রুতই যায়। মানুষ টের পায় না। কি এক অদ্ভুত মায়াজালে জড়িয়ে আছে কথা। চাইলেই অন্য কোন উপায়ে সে অভির সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু কখনো সে ইচ্ছেটা হয় না। মানুষ পতার অধিক প্রিয় কোনকিছুর সাথে মনের টানের প্রয়োজনেই দূরত্ব তৈরি করে রাখে। দূরত্বেও কোন কোন সম্পর্ক সুন্দর, জ্বলজ্বলে থাকে। সম্পর্কের আবেদনটা দিনের পর দিন একই রকম থাকে।
কথা ভাবে, ‘আচ্ছা? অভি কি আমার SMS আসলেই খেয়াল করে না? নাকি করে? তাহলে কি ইচ্ছে করে এড়িয়ে যায়? নাকি অন্য কিছু’? অভি ভাবতে থাকে, ‘কথা নামের মেয়েটার কি সত্যিই কোন অস্তিত্ব আচ্ছে? নাকি এটা FAKE’? কিন্তু কথার SMSগুলো অভি না পড়লেও মন থেকে বাইরে রাখতে পারে না। ভাবতে থাকে, ‘কেন আমি ওর SMS পড়ি না? কেনই বা আমি এখনো ওর কথা ভাবছি’?
কাকতালীয়ভাবে অভি আর কথা দুজনই অন্ধকারে বসে বসে এইসব ভাবছে। মানুষ অন্ধকারেই নিজের সাথে সবচেয়ে বেশী কথা বলতে পারে।
অভি নিজের অজান্তেই শোতে কথার SMS খুঁজে বেড়ায়। কথার SMS চোখে পড়লে মুখে একটা হাসি চলে আসে। কেন আসে তা সে জানে না। আবার হয়ত জানে। এই এত এত SMS এর মাঝে কথার SMS আলাদা কিছু না। আবার হয়ত আলাদা। মানুষের জীবনভর্তি এরকম অনেক রকমের হয়ত থাকে। মানুষ তা এড়িয়ে যেতে পারে না। আবার আবিষ্কারও করতে পারে না। অভির মনে হয়, কথা দেখতে কেমন হবে?ফর্সা না কালো? নাকি শ্যামলা? বেটে না লম্বা? মোটা না পাতলা? আচ্ছা যেমনই হোক তাতে তার কি? নিজেকে সামলে নিয়ে আবার শোতে মন দেয় অভি।
অভিকে শোনা কথার নেশা না ঘোর বুঝতে চায় না সে। কথা শুধু জানে অভিকে শুনতে তার ভালোলাগে। খুব বেশী ভালোলাগে। এটা কি শুধু ভালোলাগা? নাকি? নাহ! কিছু না। কথা মনে মনে চিন্তা করে একদিন এমন হতে পারে না? কোন এক জায়গায় অভির সাথে তার হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল। কেমন হবে তখন? আবার নিজেই ভাবে, কিছুই হবে না। অভি তো তাকে চেনে না। টুপ করে হেসে ফেলে কথা। না চিনুক। তাতে কি? দেখা তো হবে। এমন অনেক চিন্তা-আরো চিন্তা অভিকে নিয়ে চলতেই থাকে। অন্যদিকে অভিরও কথাকে নিয়ে অনেক ভাবনাই আসে। আর এভাবেই একটা দীর্ঘ সময় চলে যেতে থাকে।
ভাবনা কিংবা চিন্তা বাড়তে থাকে। নাকি বাড়তে থাকে দুজনার অনুভূতি? ভালোলাগা? কথার মনে হয়, সে কি আসলে ভালোবাসে অভিকে? বাসলেই কি? এমন ভালো তো অভিকে কতজনই বাসে। সে বাসলেও অভির কি দায় পরেছে তাকে ভালোবাসবে? তবে এটা ঠিক কথা বিশ্বাস করে ‘অভিকে তার মতন ভালো কেউ বাসতে পারবে না। কেউ বাসতে পারুক আর নাই পারুক, মানুষ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন সে এমনটাই বিশ্বাস করে। কথা কি তাহলে অভিকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেবে? না না। যদি সে ফিরিয়ে দেয়?
অভির মাথায় কথা ঢুকে গেছে। সে কি অনএয়ারেই কৌশলে কথার কথা জানতে চাইবে? সেটা কি ভালো দেখাবে? অভির সাথে কি এই বিষয়টা যায়? অভির আসলে কি করা উচিত? বিবেকবান মানুষেরা জীবনের একটা বড় অংশ সংকোচ আর জড়তায় কাটায়। আর পরিশ্রমীরা সম্মানের গৌরবে অনেক কিছুই বুকচাপা দিয়ে রাখে।
কথা চুপকথা নামে রেডিওতে SMS করে। চুপ হয়ে থেকেও ভালোলাগার কথা চিৎকার করে বলে দেয়া যায়। অভি চুপকথার সেই চিৎকার শুনতে পায়। বুঝতে পারে সব। বুঝতে পেরেই বুঝতে পারে আসলে মাইক্রোফোনের অভি আর ব্যক্তি জীবনের অভি তো আলাদা। মানুষ এইসব পছন্দ করে, মনে রাখে না। অভি জানে এমন অনেক অনুভূতিই কাজ করতে পারে। কিন্তু সেটা তার পেশাদারিত্বের জায়গায় ঠিক নয়।
ঠিক ভুলের হিসাব করতে করতে আর অভির নীরবতাতেই কথা চুপ করে হারিয়ে যায় একদিন। মানুষ তার প্রচণ্ড পছন্দের মানুষের কাছ থেকে সামান্য অবহেলায় অসামান্য কষ্টে ভোগে। যে মানুষ নিজের অনিচ্ছায় পছন্দের কিছু হারিয়ে ফেলে, সারাজীবন বুকের ভিতর কেমন যেন একটা দীর্ঘশ্বাস পুষে রাখে গোপনে। বহুদিন হল চুপকথার কোন SMS অভির চোখে পড়ে না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খুঁজে চলে সে। পৃথিবী পৃথিবীর নিয়মে চলে। একদিন অভি রূপকথা নামে একজনের চেনা অচেনা SMS পায়!

1 comment:

কিভাবে একজন সফল ব্লগার হিসেবে নিজেকে তৈরি করবেন

সফল বলি। একজন সফল ব্লগার হিসেবে যদি আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে চান তবে আপনাকে কয়েকটি বিসয়ের উপরে খুব ভালোভাবে গুরুত্বারোপ করতে হবে। নিম্নে ব...